বিস্ময়কর সৌন্দর্য মিঠামইন, ইটনা, অষ্টগ্রাম হাওর।
Wonderful beauty Mithamin, Itna, Ashtagram Haor.
বলছিলাম মিঠামইন থেকে ইটনা অথবা অষ্টগ্রাম যাওয়ার সেই বিষ্ময়কর রাস্তাটির কথা। নিকলী হাওড় পর্যটকদের নজর কাড়লেও সবাই যা মিস করে তা হলো এই রাস্তাটি। আসলে হাওড়ের প্রধান আর্কষণ এই রাস্তাটি। যতদূর দৃষ্টি যায় অথৈ জল। রাস্তার শেষ সীমানা নজরে পড়ে না। এ সৌন্দর্য ক্যামেরার লেন্সকে হার মানালেও চোখ যেন ক্লান্তি হারায়। অপলক দৃষ্টিতে খুঁজতে থাকে শেষ সীমানা... 😍।
হাওড় থেকে ৪৫ কি.মি. দূরে আমার বাড়ি হওয়ায় আমাদের তেমন পূর্ব পরিকল্পনার প্রয়োজন হয় নি। রাতে বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম। হঠাৎই একজন বলল, বর্ষাকাল তো চলে যাচ্ছে, হওড়ের পানিও নাকি শুকিয়ে যাচ্ছে আর মিঠামইন-এর নতুন রাস্তাটি ঘুরে দেখা হলো না। বললাম চল আগামীকালই হাওড়ে যাব। সাথে মিঠামইন থেকে অষ্টগ্রাম। রাতে প্লান করে ঘুমোতে গেলাম। সকাল ৭টায় বাসা থেকে বের হয়ে গেলাম। ভৈরব বাসস্ট্যান্ডের কিশোরগঞ্জ রোডে সিএনজি স্ট্যান্ডে ভৈরব টু নিকলী (১২০ টাকা পার পারসন) সিএনজি চলে। সিএনজি দিয়ে দেড় ঘন্টা লাগে নিকলী যেতে।৮.৩০ মিনিটে নিকলী বেড়িবাঁধ নামিয়ে দিল। দেখার মত তেমন কিছুই চোখে পড়ল না। সামনে শুধুই সীমাহীন জলরাশি। "সেই জলরাশির মাঝ দিয়ে নাকি রাস্তা গেছে"--কথাগুলো কানে ভাসছিল। সেই রাস্তাই মূলত প্রধান আকর্ষণ। ভাবলাম মিঠামইন না যেতে পারলে হাওড়ে আসার উদ্দেশ্যই বৃথা😑।
৩০
মিনিট বেড়িবাঁধের আশপাশ ঘুরে দেখি আস্তে আস্তে পর্যটকদের ভিড় বাড়তে লাগল। বেড়িবাঁধের ঘাটে বাঁধা সব নৌকাই রিজার্ভ করে চলতে লাগল হাওড়ের বুক চিড়ে ২ ঘন্টার পথ পাড়ি দিয়ে মিঠামইনের উদ্দেশ্য। আমরা ৩জন গিয়েছিলাম। সেখানে আরেকটা গ্রুপের সাথে এড হয়ে নৌকা রিজার্ভ করলাম মিঠামইনের উদ্দেশ্যে। ট্যুরের নেশায় আসক্তদের একটাই সমস্যা তা হলো যে কোনো পরিবেশে, যে কারো সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারা😉। চললাম নতুন সঙ্গীদের সাথে। যারা সাঁতার জানেন না অবশ্যই লাইফ জ্যাকেট সাথে নিবেন। কারণ এ পানি দেখে লোভ সামলানো দায়☺। হাওড়ের পানিতে হেলতে দুলতে ২ ঘন্টা পর নৌকা নামিয়ে দিল মিঠামইন ঘাটে। জীবনের প্রথম হাওড়ে নৌকা দিয়ে ঘুরা। তবে মনের কোণে একটা ক্ষুধা লেগে ছিল তা হলো হাওড়ের উপর দিয়ে সেই রাস্তা চোখ দিয়ে গিলার ক্ষুধা😌। নৌকা থেকে নেমে হাওড়ের তাজা মাছ দিয়ে পেটপুজো😋 সেরেই বিলম্ব না করে একটা অটো-রিক্সা রিজার্ভ করে নিলাম সেই স্বর্গের রাস্তা দেখার জন্য। মিঠামইন বাজার থেকে বের হয়েই যখন সেই রাস্তায় অটো-রিক্সা চলতে শুরু করল আমি দাঁড়িয়ে রাস্তার শেষ সীমানা খুজতেছিলাম। এটা কিভাবে সম্ভব!! যার দুপাশে আছড়ে পড়ছে ঢেউ সাথে পানির এত স্রোত সেখানে এত সুন্দর রাস্তা। আমার মনে হয় না এত সুন্দর সৃষ্টি দ্বিতীয়টি আর আছে। যে এক নজর দেখবে তার মাথায়ও একই ভাবনা আসবে। আমাদের অটো রিক্সা চলছে অষ্টগ্রামের পথে। যেতে যেতে ড্রাইভার ভাইয়ের মুখে শুনছিলাম রাস্তা তৈরি হওয়ার আগের গল্প গুলো। মিঠামইন বাজার থেকে নৌকাই ছিল একমাত্র ভরসা আশেপাশে যাওয়ার। আর কত নৌকাডুবি হতো। কত মাল-সামান নষ্ট হতো😔। সত্যিকার অর্থে এ রাস্তাটি পর্যটকদের যতটা না দৃষ্টি কাড়ে তার থেকেও বেশি আশার আলো ফুটায় এর ফলে সুবিধাভোগী দুইপাশের জনগণের মনে।
হাওড়ের একটাই সমস্যা তা হলো এর আবহাওয়া😫। যা কিনা মিনিটে মিনিটে রং পাল্টায়। মাঝরাস্তায় যেতেই অন্ধকার করে বৃষ্টির পূর্বাভাস। হাওড়ের পানি উত্তাল হতে লাগল। আমরাও তার সঠিক ব্যবহার করলাম 😎।বড় ব্রিজে রিক্সা থামিয়ে লাইফ জ্যাকেট পড়ে নেমে পড়লাম জললীলায়। এক দিকে বৃষ্টি অন্যদিকে হাওড়ের পানি। মানে বৃষ্টিস্মান। জীবনে কিছু মুহুর্ত সত্যিকার অর্থেই ভুলবার নয়। তারমধ্যে এটি একটি। তবে অবশ্যই সাবধান। সাঁতার জানলেও লাইফ জ্যাকেট সাথে নিবেন। আর বাঁধের কাছেই থাকবেন। কারণ স্রোত অনেক যা কিনা বড় সাঁতারু দেরকে কপোকাত করতে যথেষ্ট। ঘন্টাখানেক জলকেলিতে মেতে আবারও সেই রাস্তা ধরে এগুতে লাগলাম। ৪০মিনিট লাগল অষ্টগ্রাম পৌঁছাতে। সেখান থেকে ফিরার পালা। তবে ফেরার পথে যা দেখলাম তা দেখে আমি মুগ্ধ🥰। প্রকৃতি আমাকে ঠকায় নি। সে উজাড় করে তার রূপ তুলে ধরেছে। ঠিক এ কারণে হাওড় নদী থেকে পৃথক। হাওড়ের এত রূপ❤। হাওড়ের এত ঢং💗। জীবনের প্রথম পূর্ণ রংধনু দেখলাম। সম্পূর্ণ স্পষ্টভাবে, কৃপণতা বর্জন করে সে রূপ আমাদের নজর কেড়ে নিল😘। সত্যিই তুমি চিরযৌবনা, সত্যিই তুমি অপরুপ! সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার আগেই পুনরায় একই পথে বাড়ির পানে যাত্রা করলাম। তবে ফেরার পথে মন ভালো নেই😪। মনটা রেখে আসছি সেই রাস্তায়। আবার যাবো। তা ফিরিয়ে আনতে....
খরচ(মাথাপিছু):-
রোডঃ-
ভৈরব-নিকলী-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম-মিঠামইন-নিকলী-ভৈরব
ভৈরব টু নিকলী সিএনজি-১২০+
নিকলী থেকে বেড়িবাঁধ অটো রিক্সা-১০+
নৌকা রিজার্ভ -২৭০+লাঞ্চ-১৩০+
মিঠামইন টু অষ্টগ্রাম অটো রিক্সা-১৩৫+
বেড়িবাঁধ থেকে নিকলী বাজার অটো রিক্সা-১০+
নিকলী টু ভৈরব সিএনজি-১২০+
স্নেকস ও অন্যান্য-১০০=সর্বমোটঃ-৮৯৫টাকা।
(ঢাকা থেকে আসলে ঢাকা টু ভৈরব আসা-যাওয়া(২০০+২০০) যোগ করে নিবেন)
ভ্রমণ বিষয়ে কিছু কথাঃ-
১.যারা নিকলী বেড়িবাধ হয়ে মিঠামইন যেতে চান তারা দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে ভৈরব এসে সেখান থেকে সিএনজি করে যেতে পারবেন। ভাড়া ভৈরব থেকে প্রতিজন ১২০টাকা। ৫জন আসলে ভালো তাহলে অপেক্ষা করতে হবে না।(আমার মতে এই রোড টা বেষ্ট।)
২.যারা শুধু মিঠামইন যেতে চান তারা দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে কিশোরগঞ্জ পাড় হয়ে চামড়াবন্দর যাবেন। সেখান থেকে মিঠামইনের লোকাল নৌকা ছাড়ে। ভাড়া জনপ্রতি ৫০টাকা।রিজার্ভ নৌকা না নিলে শেষ নৌকা ৪.৩০ এর শিফট ধরতে হবে।
৩.নিকলী থেকে নৌকা রিজার্ভ শুক্রবার ছাড়া ২-৪হাজারের ভিতর।
৪.ডে ট্যুর এবং বাজেট ট্যুরের জন্য পারফেক্ট।
৫.নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভালো।
৬.স্থানীয়রা অনেক ভালো। তাদের সাথে অবশ্যই ভালো ব্যবহার করবেন।
৭.রাতে থাকার মত ব্যবস্থা আছে। তবে জায়গাটি নতুন হওয়ায় এখনও পর্যটকদের জন্য তেমন কোনো সুব্যবস্থা নেই। আশা করি কতৃপক্ষ পর্যটকদের চাহিদার উপর ভিত্তি করে জায়গাটিকে পর্যটন শিল্পের অন্তর্ভুক্ত করবেন এবং সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করবেন।
শেষ কথা, দেশের পর্যটন শিল্পকে এগিয়ে নিতে কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি আপনার আমারও অনেক দায়িত্ব রয়েছে। আমরা সবাই পরিবেশ কে দূষণমুক্ত এবং আবর্জনামুক্ত রাখব। তবেই প্রকৃতি তার সৌন্দর্য অকৃপণ ভাবে আমাদের উপভোগ করার সুযোগ করে দিবে।
Credit By: