মুসলিম উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী সম্পত্তির বন্টন
মুসলিম উত্তরাধিকার আইনের মুল উৎস্য হলো পবিত্র কুরআন শরীফ। পবিত্র কুরআন শরীফে মুল ০৮ টি ফারায়েজ এর উল্লেখ আছে। অবশিষ্ট সংযোজন সুন্নাহ্, ইজমা ও কিয়াস দ্বারা প্রবর্তিত। সুতরাং উত্তরাধিকারীদের প্রকৃত পাওনা পরিশোধ না করলে, প্রকারান্তরে পবিত্র কুরআন এর নির্দেশনাকে অস্বীকার করা হয়। যা একজন মুসলিমের জন্য ক্ষমার অযোগ্য অপরাধের সামিল। যে কারনে প্রকৃত উত্তরাধীকারীর ন্যায্য পাওনা, যথাসময়ে যথাযথভাবে পরিশোধ করার গুরুত্ব অস্বীকার করার কোন সুযোগ নেই। ১৯৬১ সালের ১৫ই জুলাই “মুসলিম পারিবারিক আইন” অধ্যাদেশ মোতাবেক মুসলিম উত্তরাধিকার স্বীকৃত।
মুসলিম উত্তরাধিকার আইনের উৎস্যঃ
০১। পবিত্র কুরআন শরীফ
০২। সুন্নাহ্ (হাদিস)
০৩। ইজমা (মুসলিম উম্মাহ্ এর ঐক্যমত)
০৪। কিয়াস (মুসলিম উম্মাহ্ এর ঐক্যমতের ভিত্তিতে নির্ধারিত পরিমান)
মুসলিম উত্তরাধিকারের শ্রেণীঃ
০১। জাবিল ফুরুজ (নিকট আত্মীয়ের অংশ):
---------------------------------------------
যে সকল ব্যক্তি ওয়ারেশ হিসেবে সব সময় নির্দিষ্ট অংশ প্রাপ্ত হয়, তাদেরকে জাবিল ফুরুজ (নিকট আত্মীয়) বলে। ইসলামী আইনে মোট ১২ প্রকার জাবিল ফুরুজ (নিকট আত্মীয়) আছে। তন্মধ্যে ৪ জন পুরুষ ও ৮ জন নারী। (ক) পিতা, (খ) স্বামী, (গ) দাদা (ত্বদ্বীয় উর্দ্ধক্রম), (ঘ) বৈপিত্রেয়/বৈমাত্রেয় ভাই, (ঙ) মাতা, (চ) স্ত্রী, (ছ) কন্যা, (ছ) পূত্রের কন্যা (ত্বদ্বীয় নিম্নক্রম), (জ) দাদী/নানী (ত্বদ্বীয় উর্দ্ধক্রম), (ঝ) সহোদর (বোন), (ঞ) বৈমাত্রেয় বোন, (ট) বৈপিত্রেয় বোন।
জাবিল ফুরুজ (নিকট আত্মীয়) এর অংশীদারদের পুরুষ ও মহিলা উভয়ে পক্ষের প্রথম ৩ জন অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে উত্তরাধিকারের হিস্যাংশ প্রাপ্ত হবেন।
০২। আসাবা (অবশিষ্টাংশ প্রাপ্যদার আত্মীয়):
--------------------------------------------
যে সকল ব্যক্তি ওয়ারিশ হিসেবে, মৃত ব্যক্তির ত্যাক্ত সম্পত্তির নির্দিষ্ট অংশ বন্টনের পর অবশিষ্টাং প্রাপ্ত হন, তাদেরকে আসাবা বলে।
০৩। জাবিল আরহাম (দুর-সম্পর্কের আত্মীয়):
---------------------------------------------
মৃত ব্যক্তির ত্যাক্ত সম্পত্তি বন্টনের সময়ে যদি দেখা যায় যে, তাঁর “জাবিল ফুরুজ” ও “আসাবা” কেহই নেই সেক্ষেত্রে তাঁর দুর-সম্পর্কের আত্মীয়গণের মধ্যে বন্টন করতে হবে, যা “জাবিল আরহাম” নামে পরিচিত।
ইসলামী ফারায়েজ মোতাবেক ৬ জন নিকটতম আত্মীয় কখনো-ই মৃত ব্যক্তির ত্যাক্ত সম্পত্তি হতে বঞ্চিত হবেন না। উক্ত ব্যক্তিগণ হলেন- ক) মাতা, খ) পিতা, গ) স্বামী, ঘ) স্ত্রী, ঙ) পূত্র ও চ) কন্যা।
মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি বন্টনের পূর্বে তাঁর ওয়ারিশগণের অবশ্য পালনীয় দায়ীত্বঃ
ক) মৃত ব্যক্তির দাফন-কাফনের ব্যবস্থা করা।
খ) মৃত ব্যক্তির ঋণ পরিশোধ করা।
গ) মৃতের বিধবা পত্নীর দেন-মোহর পরিশোধ করা।
মুসলিম ফারায়েজের সাধারন নিয়মঃ
০১। প্রত্যেক পূত্র প্রত্যেক কন্যার দ্বিগুণ হিস্যা পাবে।
০২। যদি পূত্র না থাকে এবং মাত্র ১ কন্যা থাকে, তবে কন্যা সকল সম্পত্তির ০.৫০০ অংশ প্রাপ্ত হবেন। একাধিক কন্যা থাকলে, সকলে মিলে সর্বোচ্চ ০.৬৬৭ অংশ প্রাপ্ত হবেন।
০৩। সন্তান থাকলে স্ত্রী ০.১২৫ অংশ প্রাপ্ত হবেন।
০৪। নিঃসন্তান স্ত্রী ০.২৫০ অংশ প্রাপ্ত হবেন।
০৫। সন্তান থাকলে মৃতের পিতা ০.১৬৭ অংশ প্রাপ্ত হবেন।
০৬। মৃতের সন্তান না থাকলে, মৃতের পিতা অন্যান্য অংশীদারের অংশ বাদে অবশিষ্টাংশ অংশ প্রাপ্ত হবেন।
০৭। সন্তান থাকলে মৃতের মাতা ০.১৬৭ অংশ প্রাপ্ত হবেন।
০৮। মৃতের সন্তান না থাকলে, মৃতের মাতা ০.৩৩৩ অংশ প্রাপ্ত হবেন। কিন্তু মৃত ব্যক্তির দুই বা ততোধিক ভাই/বোন থাকলে মাতার অংশ বর্ধিত হবে না। পিতা এবং স্বামী/স্ত্রী জীবিত থাকলে স্বামী/স্ত্রীর অংশ বাদে যা অবশিষ্ট থাকবে, মৃতের মাতা তা হতে ০.৩৩৩ অংশ প্রাপ্ত হবেন।
০৯। মৃতের পূত্র জীবিত থাকলে, মৃতের ভাই-বোন কোন অংশ প্রাপ্ত হবেন না।
১০। মৃতের পিতা/পূত্র/কন্যা/ভাই/বোন না থাকলে দুরবর্তী আত্মীয়গণ ওয়ারিশ বলে গন্য হবেন।
১১। মৃত ব্যক্তি নিঃসন্তান হলে পিতা ০.৬৬৭ অংশ প্রাপ্ত হবেন।
১২। মৃত ব্যক্তি নিঃসন্তান হলে মাতা ০.৩৩৩ অংশ প্রাপ্ত হবেন।
১৩। মৃতের পিতা/পূত্র/কন্যা/ভাই/বোন না থাকলে, ১ জন বৈপিত্রেয় ভাই ০.১৬৬ অংশ প্রাপ্ত হবেন।
১৪। মৃতের পিতা/পূত্র/কন্যা/ভাই/বোন না থাকলে, ১ জন বৈপিত্রেয় বোন ০.১৬৬ অংশ প্রাপ্ত হবেন।
১৫। মৃতের পিতা/পূত্র/কন্যা/ভাই/বোন না থাকলে, বৈপিত্রেয় ভাই/বোন একাধিক হলে সকলে মিলে ০.৩৩৩ অংশ প্রাপ্ত হবেন।
১৬। নিঃসন্তান স্ত্রীর স্বামী ০.৫০০ অংশ প্রাপ্ত হবেন। তবে সন্তান থাকলে বা পূর্বের স্বামীর সন্তান থাকলেও স্ত্রী ০.২৫০ অংশ প্রাপ্ত হবেন।
১৭। নিঃসন্তান স্বামীর স্ত্রী ০.২৫০ অংশ প্রাপ্ত হবেন। তবে সন্তান থাকলে ০.১২৫ বা পূর্বের স্বামীর অন্য স্ত্রীর সন্তান থাকলেও স্ত্রী ০.১২৫ অংশ প্রাপ্ত হবেন।
১৮। মৃতের পিতা/মাতা/পূত্র/কন্যা না থাকলে, শুধুমাত্র ১ বোন থাকলে তিনি ০.৫০০ অংশ প্রাপ্ত হবেন। আর যদি বোনের সংখ্যা একাধিক হয়, সকলে মিলে ০.৬৬৭ অংশ প্রাপ্ত হবেন।
১৯। মৃতের পিতা/মাতা/পূত্র/কন্যা না থাকলে, ভাই-বোন থাকলে তাঁরা ২:১ অনুপাতে অংশ প্রাপ্ত হবেন।
২০। স্বামী সন্তানহীনা বোনের সকল সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হবেন তাঁর ভাই/ভাইগণ।
২১। পূত্রের কোন ওয়ারিশ না থাকলে পিতামহ ০.৫০০ অংশ প্রাপ্ত হবেন।
২২। মৃতের পিতামহী ০.১৬৭ অংশ প্রাপ্ত হবেন।
২৩। মৃতের একাধিক পিতামহী থাকলে, তাঁরা সকলে মিলে ০.১৬৭ অংশ প্রাপ্ত হবেন।
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ, প্রোক্ত বর্ণনা মোতাবেক নিজ নিজ উত্তরাধিকার বুঝে নিন এবং যারা বঞ্চিত হচ্ছেন, তাঁদেরকে প্রাপ্য উত্তরাধিকার বুঝে পেতে সহযোগিতা করুন। আপনাদের সহযোগিতায় বঞ্চিত ও হয়রানির শিকারগ্রস্থ প্রকৃত উত্তরাধিকারীগণ তাঁদের ন্যায্য পাওনা বুঝে পাবে এই প্রত্যাশায় এ সংক্ষিপ্ত প্রয়াস আমার।